মাঙ্কিপক্স ভাইরাস কি? কিভাবে ছড়ায় ও কতটা প্রানঘাতী?
মাঙ্কিপক্স কি? বিশ্বে করোনা মহামারি চলছে।বর্তমানে করোনা মহামারির প্রাদুর্ভাব কমতে শুরু করলেও বিশ্বে এখন নতুন আতংকের নাম মাঙ্কিপক্স।বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এখন মাঙ্কিপক্স নামের বিরল একটি ভাইরাস জনিত রোগ ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে। উত্তর আমেরিকা, ইউরোপসহ বেশ কয়েকটি দেশে মাঙ্কিপক্সের বেশ কিছু সংখ্যক রোগী শনাক্ত হয়েছেন। মে মাসের শুরু থেকে এ সংক্রমণ বাড়ছে। মহামারি বিশেষজ্ঞ মারিয়া ভ্যান কেরখোভ মঙ্গলবার ডব্লিউএইচওর (WHO)এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমাদের সংক্রমণ ছড়ানো দেশগুলোয় মাঙ্কিপক্সের ছড়ানোর বিষয়টি ভালোভাবে বুঝতে হবে। এর প্রার্দুভাব, ঝুঁকি ও বিস্তারের বিষয়টিতেও নজর দিতে হবে।’
মাঙ্কিপক্স একটি বিরল ও স্বল্পপরিচিত ভাইরাসজনিত রোগ। এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনাগুলো নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন ইউরোপীয় দেশ।
মাঙ্কিপক্স কি?
মাঙ্কিপক্স কি? মাঙ্কিপক্স একটি রোগের নাম।মাঙ্কিপক্স সংক্রমণের পেছনে রয়েছে মাঙ্কিপক্স নামের ভাইরাস। এটি স্মলপক্স ভাইরাস শ্রেণির। বিশেষজ্ঞরা ধারনা করে বলছেন, মাঙ্কিপক্স এখন পর্যন্ত কম গুরুতর ও এটির সংক্রমণের সক্ষমতা তুলনামূলক কম।
মাঙ্কিপক্স রোগটি ক্রান্তীয় রেইনফরেস্ট অঞ্চলের কাছাকাছি মধ্য ও পশ্চিম আফ্রিকার প্রত্যন্ত অংশে বেশি দেখা যাচ্ছে।
মাঙ্কিপক্স ভাইরাসের প্রধান দুটি ধরন
১. পশ্চিম আফ্রিকান ও
২. মধ্য আফ্রিকান।
যুক্তরাজ্যে এ ভাইরাসে আক্রান্ত দুই ব্যক্তি আফ্রিকার দেশ নাইজেরিয়া ভ্রমণ করে এসেছেন। তাই তাদের ভ্রমন ইতিহাস হতে ধারণা করা হচ্ছে, তাঁরা ভাইরাসটির পশ্চিম আফ্রিকান ধরনে আক্রান্ত হয়েছেন। সাধারনত এই ধরনে আক্রান্ত ব্যক্তির উপসর্গ মৃদু বলে ধরা হলেও তা এখনো নিশ্চিত নয়।
মাঙ্কিপক্স ভাইরাস
গুটিবসন্তের গোত্রের ভাইরাস এই মাঙ্কিপক্স।মাঙ্কিপক্স রোগটি নিয়ে আতঙ্কের শেষ নেই বিশেষজ্ঞদের। তাদের আতঙ্কের সবচেয়ে বড় কারণ হলো, এ রোগের বিশেষ কোনো ওষুধ নেই।
উপসর্গ বা মাঙ্কিপক্সের প্রাথমিক লক্ষণসমূহ
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন বা সিডিসির বিশেষজ্ঞরা এই রোগের লক্ষণ হিসেবে বলছেন, রোগীর মধ্যে আক্রান্তের ৬-১৩ দিনের মধ্যে মাথাব্যথা, জ্বর, পেশিতে ব্যথা,মাংসপেশির টান, ক্লান্তি ভাব, শরীরে র্যাশ, চুলকানি, শরীরে বিভিন্ন লসিকা গ্রন্থিতে ফোলাভাব, অসংখ্য ছোট আকারের ক্ষতচিহ্ণ ইত্যাদি।জ্বর কমে আসলে শরীরে দেখা দেয় ফুসকুড়ি। অধিকাংশ ঘটনায় শুরুতে মুখে দেখা দেয় ফুসকুড়ি।পরে শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে; বিশেষ করে হাতের তালু ও পায়ের তলায়।
সাধারণত সংক্রমণ নিজে থেকেই কেটে যায়।রোগী ১৪ থেকে ২১ দিনের মধ্যে সেরে ওঠেন।
যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা সংস্থা বলছে, যদি কেউ ধারনা করে থাকেন, তিনি মাঙ্কিপক্সে সংক্রমিত হয়েছেন, তাঁর উচিত চিকিৎসককে দেখানো। তবে হাসপাতাল বা ক্লিনিকে যাওয়ার আগেই তাকে উপসর্গ বা মাঙ্কিপক্সের প্রাথমিক লক্ষণসমূহ জানাতে হবে।
যেভাবে ছড়ায়
মাঙ্কিপক্স কি? মাঙ্কিপক্সের ভাইরাসকে একই সঙ্গে ছোঁয়াচে ও সংক্রামক ব্যাধি হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন বিশেষজ্ঞরা। বিভিন্ন ধরনের প্রাণীর মাধ্যমে এ রোগ ছড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে।যেমন বিশেষ করে সংক্রমিত বানর, ইঁদুর ও কাঠবিড়াল।এ ছাড়া শ্বাসনালি, শরীরে তৈরি হওয়া কোনো ক্ষত, নাক কিংবা চোখের মাধ্যমেও অন্যের শরীরে প্রবেশ করতে পারে মাঙ্কি ভাইরাস।এ ছাড়া ভাইরাসযুক্ত বস্তু যেমন বিছানাপত্র ও জামাকাপড়ের সংস্পর্শে এলেও ছড়াতে পারে ভাইরাসটি।
তবে এই সময় গবেষকরা বলছেন, আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এলেও এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। মাংস ভালো ভাবে রান্না না করে খাওয়া, সংক্রামিত প্রাণীর প্রাণিজ পণ্য খাওয়া,একই প্লেট বা কাপ ব্যবহার করা সম্ভাব্য ঝুঁকির কারণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
যুক্তরাজ্যের হেলথ সিকিউরিটি এজেন্সি (ইউকেএইচএসএ)। সংস্থাটির প্রধান চিকিৎসা পরামর্শক সুসান হপকিনস বলেন, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপের সংক্রমণসংক্রান্ত প্রতিবেদনের ফলে মাঙ্কিপক্সের কমিউনিটি সংক্রমণের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এ থেকে এটি আরও ছড়ানোর উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
এই রোগ সমকামী পুরুষদের ক্ষেত্রে বেশি ছড়াচ্ছে বলে জানা গেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে বিষয়টি খতিয়ে দেখার কথা বলা হয়েছে। সংস্থাটির সহকারী মহাপরিচালক সোসে ফল এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘পুরুষের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনকারী পুরুষের মধ্যে আমরা এই রোগের সংক্রমণ দেখছি। এই নতুন তথ্যের বিষয়টি আমাদের আরও ভালোভাবে তদন্ত করতে হবে। এ ছাড়া যুক্তরাজ্যসহ অন্যান্য দেশে স্থানীয় সংক্রমণের বিষয়টিও ভালোভাবে বুঝতে হবে।’
যুক্তরাজ্যের গবেষকেরা বলেন, মাঙ্কিপক্সকে আগে যৌনবাহিত রোগ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়নি। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের রোগনিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংস্থা (সিডিসি) বলছে, ‘যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে’বেশির ভাগ মাঙ্কিপক্স সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে।
যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে এ রোগ ছড়াতে পারে আগে এমনটা মনে করা না হলেও এখন ধারণা করা হচ্ছে, যৌন মিলনের সময় সরাসরি সংস্পর্শে এ ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটতে ও পারে।
কতটা বিপজ্জনক
মাঙ্কিপক্সের অস্তিত্ব অনেক আগেই ছিল পৃথিবীতে। ১৯৫৮ সালে কোপেনহেগেনের স্টেট সিরাম ইনস্টিটিউটে অনুষ্ঠিত সাইনোমলগাস বানরের উপনিবেশে মাঙ্কিপক্স ভাইরাস প্রথম শনাক্ত করা হয়েছিল। তারপর কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রে ১৯৭০ সালে মানুষের মধ্যে এটি প্রথম শনাক্ত করা হয়।
চিকিৎসা
মাঙ্কিপক্স কি? মাঙ্কিপক্সের আসলে কোনো চিকিৎসা নেই, তবে সংক্রমণ প্রতিরোধের মাধ্যমে এটি ছড়িয়ে পড়া নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব বলে মনে করা হয়।
মাঙ্কিপক্স ভাইরাস চিকেন পক্স থেকে কতটা আলাদা
চিকেন পক্স ও মাঙ্কিপক্সের পার্থক্য খুঁজে বের করা খুব একটা সহজ না। মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত হলে চিকেন পক্সের মতোই ফ্লুইড যুক্ত ফুসকুড়ি ত্বকে দাগ সৃষ্টি হয়। দেখতে চিকেন পক্সের সঙ্গে মিল থাকলেও মাঙ্কিপক্সকে একটি ভিন্ন ভাইরাস বলেই আখ্যায়িত করেছেন বিশেষজ্ঞরা। বিরল এ রোগটির সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা পদ্ধতি এখনো অজানা থাকায় এ ভাইরাস যাতে মানুষের মাঝে বেশি ছড়াতে না পারে সেদিকে আমাদের সচেষ্ট থাকতে হবে।
সূত্র: WHO
আনন্দবাজার পত্রিকা
ইন্টারনেট