Astaghfirullah Bangla | আস্তাগফিরুল্লাহ অর্থ কি?

Astaghfirullah Bangla | আস্তাগফিরুল্লাহ অর্থ কি

আস্তাগফিরুল্লাহ দোয়া বাংলা উচ্চারণ (Astaghfirullah Bangla) : আস্তাগফিরুল্লাহ- হাল্লাযি লা ইলা-হা ইল্লা হুয়াল হাইউল কাইউম অ আতুবু ইলাইহি।

আস্তাগফিরুল্লাহ অর্থ কি (Astaghfirullah Meaning in Bengali) – আমি সেই আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি যিনি ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই। যিনি চিরঞ্জীব, অবিনশ্বর এবং আমি তাঁর কাছে তওবা করছি। 

এই দুয়া ৩ বার পড়লে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পলায়ন করার মত পাপ হলেও মাফ হয়ে যাবে আশাকরা যায়।

কোরআনে এরশাদ হয়েছে,

‘হে আমার কওম, তোমরা তোমাদের রবের কাছে ইস্তেগফার করো অতঃপর তার কাছে তওবা করো, তাহলে তিনি তোমাদের ওপর মুষলধারে বৃষ্টি পাঠাবেন এবং তোমাদের শক্তির সঙ্গে আরও শক্তি বৃদ্ধি করবেন। আর তোমরা অপরাধী হয়ে বিমুখ হয়ো না।’ (সূরা হুদ, আয়াত ৫২)।

‘আল্লাহ তাদের আজাব দানকারী নন এমতাবস্থায় যে, তারা ইস্তেগফার করছে।’ (সূরা আনফাল : আয়াত ৩৩)।

‘(আর তোমরা তোমাদের রবের কাছে ইস্তেগফার করো। এরপর তার কাছে ফিরে যাও, তাহলে) অধিক আনুগত্যশীলকে তাঁর আনুগত্য মোতাবেক দান করবেন।’ (সূরা হুদ : আয়াত ৩)।

আস্তাগফিরুল্লাহ অর্থ কি?(Astaghfirullah Bangla Meaning)

Astaghfirullah Bangla, আস্তাগফিরুল্লাহ সাধরনত একটি আরবি শব্দ। দুটি শব্দ মিলে আস্তাগফিরুল্লাহ বাক্যটি তৈরি হয়েছে ৷ আস্তাগফিরুল্লাহ এর অর্থ হচ্ছে, ‘আমি আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করছি’। কোন খারাপ কাজ করে ফেললে পরবর্তীতে অনুতপ্ত হলে এ দোয়াটি পাঠ করা হয়। আস্তাগফিরুল্লাহ সচরাচর ব্যবহৃত একটি বাক্য। যদিও বাক্যটির অর্থ অনেক গভীর, তবে আমরা অর্থ না জানার কারণে আমরা এর ভাব বজায় রাখতে পারি না। 

আস্তাগফিরুল্লাহ দোয়া বাংলা উচ্চারণ

আস্তাগফিরুল্লাহ সম্পর্কিত বেশ কয়েকটি দোয়া আছে। আপনি নির্দিষ্ট একটি অথবা চাইলে প্রতিটি পাঠ করেই আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে পারেন।

দোয়া ০১: আস্তাগফিরুল্লাহ
অর্থ: আমি আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করছি

দোয়া ০২: রব্বিগফিরলি ওয়াতুবু ইলাইহি ইন্নাকা আন্তাত তাওয়াবুর রাহিম ৷
অর্থ: হে আমার প্রভু, আমাকে ক্ষমা করুন ৷ আমার তওবা কবুল করুন ৷ নিশ্চয় আপনি তওবা কবুলকারী রহমশীল৷

দোয়া ০৩: আস্তাগফিরুল্লাহা ওয়াতুবু ইলাইহি ৷
অর্থ: আমি আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তার দিকে প্রত্যাবর্তন করছি ৷

দোয়া ০৪: আল্লা-হুম্মা আনতা রব্বী লা ইলা-হা ইল্লা আনতা খালাক্বতানী, ওয়া আনা ‘আবদুকা ওয়া আনা ‘আলা ‘আহদিকা ওয়া ওয়া‘দিকা মাসতাত্বা‘তু, আ‘ঊযুবিকা মিন শার্রি মা ছানা‘তু। আবূউ লাকা বিনি‘মাতিকা ‘আলাইয়া ওয়া আবূউ বিযাম্বী ফাগফিরলী ফাইন্নাহূ লা ইয়াগফিরুয্ যুনূবা ইল্লা আনতা।

অর্থ: হে আল্লাহ! তুমি আমার পালনকর্তা। তুমি ছাড়া আর কোন উপাস্য নেই। তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তোমার দাস। আমি আমার সাধ্যমত তোমার নিকটে দেওয়া অঙ্গীকারে ও প্রতিশ্রুতিতে দৃঢ় আছি। আমি আমার কৃতকর্মের অনিষ্ট হতে তোমার নিকটে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আমি আমার উপরে তোমার দেওয়া অনুগ্রহকে স্বীকার করছি এবং আমি আমার গোনাহের স্বীকৃতি দিচ্ছি। অতএব তুমি আমাকে ক্ষমা কর। কেননা তুমি ব্যতীত পাপসমূহ ক্ষমা করার কেউ নেই।

দোয়া ০৫: আস্তাগফিরুল্লাহা রাব্বি মিং কুল্লি জাম্বিন ওয়াতুবু ইলাইহি ,  লা হাওলা ওয়ালা কুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহিল আলিয়্যিল আজিম।

অর্থ : আমি আমার প্রভুর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি সমস্ত পাপ কাজের জন্য। আমি তার কাছে ফিরে আসি। আল্লাহ তাআলার একমাত্র সাহায্য ছাড়া গুনাহর কাছ থেকে বেঁচে থাকার এবং নেক কাজ করার কোন শক্তি নেই।

সূরা আর রহমান এর উচ্চারণ ও বাংলা অর্থ

আস্তাগফিরুল্লাহ কখন পড়তে হয়?

মিশকাত শরীফের হাদীসে জানা যায়, নবীজি হযরত মোহাম্মদ (সা:) প্রতিদিন প্রতি ওয়াক্ত নামাজের সালাম ফিরানোর পরে এ দোয়াটি তিনবার পাঠ করতেন ৷ তবে শুধু নামাজের পরই না, যেকোন সময়েই দোয়াটি পাঠ করা যায়। এর মধ্যে আল্লাহর মুখাপেক্ষীর বহিঃপ্রকাশ দেখা যায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে এই দুয়া পাঠ করবে, দিনে পাঠ করে রাতে মারা গেলে কিংবা রাতে পাঠ করে দিনে মারা গেলে, সে জান্নাতি হবে’। এই ইস্তেগফারটি কমপক্ষে ৭০ থেকে ১০০ বার পাঠ করা উচিত ৷ আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) নিষ্পাপ হওয়া সত্ত্বেও প্রতিদিন ৭০ থেকে ১০০ বার তওবা ও ইস্তিগফার করতেন। (বুখারী শরিফ)

আস্তাগফিরুল্লাহ এর উপকারিতা/আস্তাগফিরুল্লাহ ফজিলত (Astaghfirullah Fazilat Bangla):

০১. গুনাহ থেকে ক্ষমা প্রাপ্তি হয়।

০২. আল্লাহ ও বান্দার মাঝে যে দূরত্ব থাকে, তা ঘুচে যায়।

০৩. দীন ও ঈমানের স্বাদ আস্বাদন করা যায়।

০৪. আল্লাহর অসীম ভালোবাসা অর্জিত হয়।

০৫. আল্লাহ তা’আলার নৈকট্য অর্জিত হয়। তার তাওবার কারণে আল্লাহ খুবই আনন্দিত হন।

০৬. মানব ও জ্বীন শয়তান থেকে তাকে হিফাযত করা হয়।

০৭. দ্বীনি পালন সহজ হয়। এবং কর্মজীবন হয় মহা সুখের।

০৮. মন্দ কাজ থেকে বেঁচে থাকা যায়।

০৯. ইস্তিগফারকারীকে আল্লাহ উত্তম সন্তান, সম্পদ ও জীবিকার দ্বারা সম্মানিত করে থাকেন। 

১০. দুশ্চিন্তা, পেরেশানি সব দূর হয়।

১১. হাশরের মাঠে মানুষ যখন প্রচন্ড গরম ও ঘামের মধ্যে পেরেশান থাকবে, তখন ইস্তিগফারকারী থাকবে আরশের ছায়াতলে।

১২. কিয়ামাতের দিন মানুষ যখন অস্থির থাকবে, ইস্তিগফারকারী তখন ডানপন্থী মুত্তাকিনদের দলে থাকবে মহা আনন্দে।

১৩.  ইস্তিগফারকারীর কাছে দুনিয়াকে খুব তুচ্ছ করে দেয়া হয়।

১৪. আরশ বহনকারী ফেরেশতাগণও তার জন্য দু’আ করতে থাকেন। 

১৫.  মৃত্যুর সময় ও ফেরেস্তারা তার জন্য সুসংবাদ নিয়ে আসে।

ইস্তিগফারের আরও অনেক ফজিলত। যা বলে বা গুনে শেষ করা যাবে না। আল্লাহ তায়া’লা ভালো জানেন। 

সূরা মূলক(Surah Al-Mulk)

ইস্তিগফারের কিছু হাদিস 

হাদিস নং ০১

সাওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাত শেষ করে তিনবার ইসতিগ্‌ফার করতেন এবং বলতেন- “আল্লা-হুম্মা আন্‌তাস্‌ সালা-মু ওয়া মিনকাস্‌ সালা-মু তাবা-রক্‌তা যাল জালা-লি ওয়াল ইকর-ম” (অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তুমিই শান্তিময় এবং তোমার থেকে শান্তি আসে। তুমি কল্যাণময় এবং সন্মান ও প্রতিপত্তির অধিকারী)।

হাদীস বর্ণনাকারী ওয়ালীদ বলেন- আমি আওযা’ঈকে জিজ্ঞেস করলাম তিনি (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিভাবে ইস্‌তিগফার করতেন। তিনি বললেন, তিনি (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতেন- ‘আস্‌তাগ্‌ফিরুল্ল-হ, আস্‌তাগ্‌ফিরুল্ল-হ’।

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস, মুসলিম ১২২১, মিশকাত ৯৬১

হাদিস নং ০২

শারীক আল-হাওযানী (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ

একদা আমি আয়িশা (রাঃ) এর নিকট গিয়ে বলি, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাতে জেগে সর্বপ্রথম কোন দু’আ পড়ার মাধ্যমে শুরু করতেন? তিনি যখন রাতে জাগতেন তখন দশবার আল্লাহ্‌ আকবার ও দশবার আল্‌হামদুলিল্লাহ বলতেন। আর সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি দশবার ও সুবহানাল মালিকুল কুদ্দুস দশবার এবং আসতাগফিরুল্লাহ ও লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ দশবার বলতেন। অতঃপর তিনি বলতেনঃ হে আল্লাহ্‌! আমি আপনার নিকট দুনিয়া ও আখিরাতের যাবতীয় অভাব, সংকীর্ণতা ও বিপদগ্রস্ততা হতে আশ্রয় চাইছি। এরপর তিনি সলাত শুরু করতেন।

হাদিসের মানঃ হাসান সহিহ, আবু দাউদ ৫০৮৫

হাদিস নং ০৩

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -কে বলতে শুনেছিঃ আল্লাহ্‌র শপথ! আমি প্রতিদিন আল্লাহ্‌র কাছে সত্তরবারেরও অধিক ইস্তিগফার ও তাওবাহ করে থাকি।

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস, বুখারী ৬৩০৭

সূরা ইয়াসিন আরবি সহ বাংলা উচ্চারণ ও ফজিলত

হাদিস নং ০৪

আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অধিক সংখ্যায় এ দু’আ পড়তেনঃ “সুবহা-নাল্লা-হি ওয়াবি হামদিহী আসতাগফিরুল্ল-হা ওয়াতুবু ইলাইহি”। অর্থাৎ, “মহান পবিত্র আল্লাহ। সমস্ত প্রশংসা তার জন্য। আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাচ্ছি, আমি তার কাছে তাওবাহ করছি, অনুতপ্ত হচ্ছি।” রাবী বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রসুল! আমি আপনাকে অধিক সংখ্যায় এ কথা বলতে দেখেছি “সুবহা-নাল্লা-হি ওয়াবি হামদিহী আসতাগফিরুল্ল-হা ওয়াতুবু ইলাইহি”।

রাবী বলেন, তিনি বললেনঃ আমার মহান প্রতিপালক আমাকে সুসংবাদ দিয়েছেন যে, আমি অচিরেই আমার উম্মাতের মধ্যে একটি নিদর্শন দেখতে পাব। যখন আমি সে আলামত দেখতে পাই তখন অধিক সংখ্যায় এ দু’আ পাঠ করতে থাকিঃ “সুবহা-নাল্লা-হি ওয়াবি হামদিহী আসতাগফিরুল্ল-হা ওয়াতুবু ইলাইহি”। সে নিদর্শন সম্ভবত এই “ইযা-জা-আ নাসরুল্ল-হি ওয়াল ফাতহ…”। অর্থাৎ “ যখন আল্লাহর সাহায্য আসবে এবং বিজয় লাভ হবে (অর্থাৎ-মাক্কাহ্ বিজয়) , তুমি দেখতে পাবে, দলে দলে লোক আল্লাহর দীনে প্রবেশ করছে; তখন তুমি তোমার প্রভুর প্রশংসা সহকারে তাঁর তাসবীহ করো এবং তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। নিঃসন্দেহে তিনি খুবই তাওবাহ গ্রহনকারী। (সুরা আন- নাসর)।

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস, মুসলিম ৯৭৫

হাদিস নং ০৫

নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর মুক্তদাস বিলাল ইবনু ইয়াসার ইবনু যায়িদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

আমি আমার আব্বাকে আমার দাদার সূত্রে বর্ণনা করতে শুনেছি, তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছেন, যে ব্যক্তি দু‘আ পাঠ করবে : “আসতাগফিরুল্লাহ আল্লাযী লা ইলাহা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল ক্বাইয়ুম ওয়া আতূবু ইলাইহি” (অর্থাৎ- আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই, তিনি ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন মা‘বূদ নেই, তিনি চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী এবং তাঁর কাছে তাওবাহ্ করি)। সে জিহাদের ময়দান হতে পলায়ন করলেও তাকে ক্ষমা করা হবে।

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস,আবু দাউদ ১৫১৭

আল্লাহ্‌ আমাদের বেশী বেশী আস্তাগফিরুল্লাহ পড়ার তৌফিক দান করুক, আমিন।

1 thought on “Astaghfirullah Bangla | আস্তাগফিরুল্লাহ অর্থ কি?”

Leave a Comment